সচিব ও জেলা প্রশাসকসহ ১৭ জনকে লিগ্যাল নোটিশ
বর্ডার হাটে বিক্রেতা ও ক্রেতা নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করতে লিগ্যাল নোটিশ
- আপডেট সময় : ০৫:৩১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩
- / 336
রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুরে বালিয়ামারী বর্ডার হাটে কয়েকবার ক্রেতা বিক্রেতা নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও নতুনভাবে ক্রেতা ও বিক্রেতা নিয়োগের বিষয়ে ষড়যন্ত্র করছে একটি কুচক্রী মহল। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে লিগ্যাল নোটিশে। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও রাজিবপুরের ইউএনও সহ ১৭ জনকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন রাখি কর্তৃক স্বাক্ষরিত উক্ত নোটিশটি প্রদান করেন। সেই সাথে লিগ্যাল নোটিশের উল্লেখিত ব্যাখ্যার সাথে প্রতিটি পয়েন্টের সংযুক্তি তথ্য প্রদান করা হয়েছে। আকিদুল ইসলাম সুমন ও শরিফুল ইসলাম সোনা কে লিগ্যাল নোটিশে বাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বর্ডার হাটে বিক্রেতা ও ক্রেতা নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করতে লিগ্যাল নোটিশটি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, নতুন পণ্য বিক্রেতা ও ক্রেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া বানচাল করে এককভাবে একটি গোষ্ঠী লাভবান হতে চান, যা স্পষ্টত উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও নিয়ম বহির্ভূত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। যাতে সার্বিকভাবে জনস্বার্থে বর্ডার হাটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যহত না হয়। সার্বজনীন ন্যায়সংঙ্গত সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সীমান্ত হাটের গণ- বিজ্ঞপ্তির আলোকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পণ্য বিক্রেতা ও ক্রেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সীমান্ত হাটের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অংশে ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা বর্তমানে কম সংখ্যক বিদ্যমান থাকায় প্রতিনিয়ত সার্বিকভাবে এই অঞ্চলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। দ্রুত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না হলে ন্যায় সঙ্গত অধিকার থেকে এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এর ব্যতয় ঘটলে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জবাব চেয়েছে। সেই সাথে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে।
রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তে ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কালাইচর সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বর্তমান সরকার বর্ডার হাটটি চালু করে। সরকারের নানাবিধ উদ্দেশ্যের মধ্যে সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে চাঙ্গা করা, তাদের জীবন জীবিকার কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা এবং তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা। পাশাপাশি দু’দেশের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি, ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা। মূলত স্থানীয় বাজারের মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদনের বিপণন প্রচলন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে দু’দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত অবহেলিত লোকদের সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সীমান্ত হাট স্থাপন করা হয়।
২০১০ সালে ভারত সফরকালে ইস্যুকৃত জয়েন্ট কমিউনিক অনুযায়ী উভয় দেশের সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপনের সিদ্ধান্তে সমঝোতা স্মারক চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের ৫০ জন করে মোট ১০০ জন বিক্রেতা কার্ডধারী পণ্য বিক্রি করতে পারেন। দু’দেশের সীমান্ত এলাকায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের পাঁচ (০৫) কিলোমিটারের মধ্যে যাদের বসবাস শুধু তারাই বর্ডার হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা হতে পারবেন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অংশে ৫০ জন বিক্রেতার কথা উল্লেখ্য থাকলেও প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২৫ জন বিক্রেতা নিয়োগ করেন। পক্ষান্তরে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ৫০ জন বিক্রেতা নিয়োগদানের মাধ্যমে হাটটিতে বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ অংশে বাকী ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা নিয়োগ দানের উদ্দেশ্যে গত ২০২০ সালের ৪ই মার্চ তৎসময়ে চর রাজিবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত গণ-বিজ্ঞপ্তি পেশ করেন। যার বিপরীতে ১৫৭৯ জন আবেদনপত্র জমা দেন। গণ-বিজ্ঞপ্তির পর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই বিশ্ব মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৬ মে বালিয়ামারী- কালাইয়ের চর বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা পুনরায় নিয়োগের জন্য কুড়িগ্রাম জেলার অতিঃ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী স্বাক্ষরিত গণ-বিজ্ঞপ্তি পেশ করেন। যার আলোকে নতুনভাবে পুনরায় ৬৮০ জনকে আবেদন সাপেক্ষে সংযুক্ত করা হয়। ২৫ জন পণ্য বিক্রেতার বিপরীতে নতুন ও পুরাতন আবেদনসহ সর্বমোট ২২৫৯ টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বর্ডার হাট পরিচালনা সংক্রান্ত গাইড লাইন এর বিধান অনুযায়ী উভয় দেশ থেকে ৫০ জন করে বিক্রেতা পণ্য বিক্রয় করতে পারবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও, ২৫ জন বিক্রেতা শুরু থেকে অদ্যবধি পণ্য বিক্রয় করে আসছে। চুক্তি অনুযায়ী আরো ২৫ জনের পণ্য বিক্রেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া অবিলম্বে সম্পন্ন করা একান্ত আবশ্যক বলে লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ রয়েছে। যা চুক্তি অনুযায়ী এ অঞ্চলের মানুষের অধিকার বটে। পক্ষান্তরে, ভারত অংশের ৫০ জন বিক্রেতা পণ্য বিক্রয় চুক্তিতে থাকলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, তাদের অংশের বিক্রেতা ৫০ জন থেকে ৭৫ জন করা হয়েছে। জানা যায়, ভারতীয় অংশে পণ্য বিক্রেতা ২৫ জনকে বাদ দিয়ে নতুন ২৫ জন নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে বাদ পড়া ২৫ জন আবেদনের প্রেক্ষিতে তা বহাল তবিয়তে ফেরত পান। তাই ভারতীয় অংশে বর্তমানে সর্বমোট ৭৫ জন পণ্য বিক্রেতা।
গত ২০২৩ সালের ৯ই আগস্ট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মহোদয় জনাব মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ কর্তৃক স্বাক্ষরিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত পত্রে উল্লেখিত সীমান্ত হাটের পণ্য বিক্রেতা সংখ্যা ৭৫ জনে উন্নীতকরণ করার জন্য একটি আবেদন প্রেরণ করেন। যা এলাকার জনসাধারণ প্রশংসার, ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানায়। যেহেতু ভারতীয় অংশে ৭৫ জন পণ্য বিক্রেতা সুবিধাভোগী রয়েছে, অপরপক্ষে, বাংলাদেশের অংশে মাত্র ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা সুবিধাভোগী রয়েছে, তাই দু’দেশের সমান সংখ্যক পণ্য বিক্রেতা করার লক্ষ্যে এটি সার্বিকভাবে যথার্থ ও যুক্তিসঙ্গত, ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্য বলে লিগার নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান প্রক্রিয়ায় ৭৫ জন পণ্য বিক্রেতা উন্নীতকরণ সময় সাপেক্ষ বা জটিল প্রক্রিয়াধীন হলে, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অংশে ৫০ জন তাই বাকী ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে জোড় দাবি জানানো হয়েছে। সেই সাথে গণ-বিজ্ঞপ্তির আলোকে নতুন পণ্য ক্রেতা আবেদনকারী হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্রেতা নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও দ্রুত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
বালিয়ামারী-কালাইয়ের চর বর্ডার হাটটি স্থাপনের পর, শুরু থেকে শুধুমাত্র যে ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা কার্ডধারী রয়েছে, তারা সীমান্ত হাটে এককভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা, বেকারত্ব দূরীকরণসহ তাদের জীবন-যাত্রার মান উন্নতি সাধন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যা বর্ডার হাট স্থাপনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি।
যেহেতু পুরাতন ২৫ জন কার্ডধারী স্বাবলম্বী ও যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তাই বর্তমানে পুরাতন ২৫ জন পণ্য বিক্রেতাকে বাদ দিয়ে নতুন ২৫ জন পণ্য বিক্রেতা নিয়োগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবহিত করে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য ব্যাপক মাইল ফলক হিসেবে প্রতীয়মান করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে পণ্য বিক্রেতা সুবিধাভোগী সর্বোপরি ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদকাল পর্যন্ত করা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সার্বিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ধাপে ধাপে সুবিধাভোগীর আওতায় অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলের অবহেলিত মানুষের জন্য সার্বজনীন যুগান্তকারী পদক্ষেপের বিষয়ে লিগ্যাল নোটিশে অবহিত করা হয়েছে।
ঢাকা, ৫ নভেম্বর (মনোযোগ প্রকাশ.কম)//এমএইচ