বাংলাদেশ ১০:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রৌমারীতে ছাত্রদলের মানববন্ধন রাজিবপুরে ইয়াবাসহ মাদক কারবারি আটক রাজিবপুরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ পালিত রৌমারীতে ইয়াবাসহ মাদক কারবারি আটক রৌমারীতে ইয়াবাসহ কারবারিকে আটক করেছে বিজিবি রৌমারীতে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে অনগ্রসরদের অধিকতর অন্তর্ভুক্তি শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত রাজারহাটে বন্যাকবলিত নারী ও কিশোরীদের নিয়ে ২য় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত উলিপুরে ২য় পর্যায়ে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত রাজিবপুরে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত রাজিবপুরে ইয়াবাসহ দুই কারবারি আটক

উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাবে এক সেতুতে

  • আপডেট সময় : ০৯:২১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩
  • / 117

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বমোট নয়টি উপজেলা রয়েছে । চর রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা দুটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা কুড়িগ্রামের অন্যান্য উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাজিবপুর নদী বন্দর থেকে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা যেতে সময় লাগে । কিন্তু শীত ও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে, গভীর কুয়াশা, নদীর রেখা পরিবর্তনের কারণে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে ৫ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায় । কখনো কুয়াশার কারণে ভুল পথে চলতে থাকে নৌকা । শুষ্ক মৌসুমে নৌকা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাধাগ্রস্ত হয় । একটি উপজেলা কতটা উন্নত তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা । কুড়িগ্রাম দেশে দারিদ্র্যের শীর্ষ জেলা । দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা হচ্ছে চর রাজিবপুর, যা কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯ দশমিক ৮ । উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। অন্তত ৩০—৪০ টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র । এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা ২০ থেকে ৩০ বারের অধিক নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে । অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী উপজেলা। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬ দশমিক ৪। কুড়িগ্রাম শহরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্লান্তিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগি ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

নৌ—রুটে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যাপক ভোগান্তি । ঝুঁকি নিয়ে চলছে নৌ—রুটে নৌ—যান চলাচল । এতে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা, মুমূর্ষ রোগী, মামলার আসামি, চাকুরীজীবী ও কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । স্বাধীনতার ৫২ বছর হলেও জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে এ নৌ—রুট গুলোতে জনসাধারণের জন্য স্পিডবোট কিংবা অন্যান্য নৌ—রুটের যানবাহনের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি ।

এলাকাবাসীর মতে, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্নতা, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীভাঙন ও বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে ২৬ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা নদীপথ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাষক আব্দুস সবুর ফারুকী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় অঞ্চলটি ছিল সর্বদা মুক্ত । পাক হানাদার বাহিনীর পদচারনা এখানে না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কোন দোষরাও ছিল না । সোজা কথায় এখানে রাজাকার আল—বদর দালালদের জন্ম হয়নি । এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি একটি মাত্র সেতু । যার মাধ্যমে সমৃদ্ধি হবে এলাকার অর্থনৈতিক জীবন যাত্রা । উত্তরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে একটি সেতুর মাধ্যমে । অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে বেকারত্ব হ্রাস পাবে ।

সংগঠক ও সাংবাদিক মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, একটি সেতুর অভাবে উন্নত চিকিৎসা , ব্যবসা— বাণিজ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ জনপদের মানুষ । সেতু নির্মাণ হলে মানুষের আর দুর্ভোগ শেষ হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে দরিদ্র এলাকার মানুষজন এগিয়ে যাবে। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি সেতু বাস্তবায়ন করার।

কুড়িগ্রাম — ৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল ছিলো রাজিবপুর ও রৌমারী। এখানে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ অনেক কমবে। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। এতে কুড়িগ্রামসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাবে এক সেতুতে

আপডেট সময় : ০৯:২১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বমোট নয়টি উপজেলা রয়েছে । চর রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা দুটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা কুড়িগ্রামের অন্যান্য উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাজিবপুর নদী বন্দর থেকে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা যেতে সময় লাগে । কিন্তু শীত ও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে, গভীর কুয়াশা, নদীর রেখা পরিবর্তনের কারণে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে ৫ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায় । কখনো কুয়াশার কারণে ভুল পথে চলতে থাকে নৌকা । শুষ্ক মৌসুমে নৌকা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাধাগ্রস্ত হয় । একটি উপজেলা কতটা উন্নত তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা । কুড়িগ্রাম দেশে দারিদ্র্যের শীর্ষ জেলা । দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা হচ্ছে চর রাজিবপুর, যা কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯ দশমিক ৮ । উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। অন্তত ৩০—৪০ টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র । এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা ২০ থেকে ৩০ বারের অধিক নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে । অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী উপজেলা। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬ দশমিক ৪। কুড়িগ্রাম শহরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্লান্তিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগি ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

নৌ—রুটে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যাপক ভোগান্তি । ঝুঁকি নিয়ে চলছে নৌ—রুটে নৌ—যান চলাচল । এতে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা, মুমূর্ষ রোগী, মামলার আসামি, চাকুরীজীবী ও কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । স্বাধীনতার ৫২ বছর হলেও জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে এ নৌ—রুট গুলোতে জনসাধারণের জন্য স্পিডবোট কিংবা অন্যান্য নৌ—রুটের যানবাহনের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি ।

এলাকাবাসীর মতে, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্নতা, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীভাঙন ও বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে ২৬ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা নদীপথ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাষক আব্দুস সবুর ফারুকী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় অঞ্চলটি ছিল সর্বদা মুক্ত । পাক হানাদার বাহিনীর পদচারনা এখানে না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কোন দোষরাও ছিল না । সোজা কথায় এখানে রাজাকার আল—বদর দালালদের জন্ম হয়নি । এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি একটি মাত্র সেতু । যার মাধ্যমে সমৃদ্ধি হবে এলাকার অর্থনৈতিক জীবন যাত্রা । উত্তরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে একটি সেতুর মাধ্যমে । অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে বেকারত্ব হ্রাস পাবে ।

সংগঠক ও সাংবাদিক মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, একটি সেতুর অভাবে উন্নত চিকিৎসা , ব্যবসা— বাণিজ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ জনপদের মানুষ । সেতু নির্মাণ হলে মানুষের আর দুর্ভোগ শেষ হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে দরিদ্র এলাকার মানুষজন এগিয়ে যাবে। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি সেতু বাস্তবায়ন করার।

কুড়িগ্রাম — ৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল ছিলো রাজিবপুর ও রৌমারী। এখানে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ অনেক কমবে। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। এতে কুড়িগ্রামসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।