“ডিপফেক ভিডিওর ঝুঁকি: প্রতারণার নতুন ফাঁদ”

মনোযোগ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম

আজকের ডিজিটাল যুগ আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছে, তবে এর সঙ্গে এসেছে নতুন ধরনের ঝুঁকি। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডিপফেক ভিডিও, যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
ডিপফেক ভিডিও হলো কৃত্রিমভাবে তৈরি করা ভিডিও যেখানে কোনো ব্যক্তির মুখমণ্ডল, কণ্ঠস্বর বা অঙ্গভঙ্গি নিখুঁতভাবে অন্য কারও ওপর বসানো হয়। ফলে দর্শকরা মনে করেন, আসল ব্যক্তি ভিডিওতে কথা বলছে বা কোনো কাজ করছে, যদিও বাস্তবে তা ঘটেনি। সহজভাবে বললে, এটি ডিপ লার্নিং ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মিথ্যা কিন্তু বাস্তবের মতো ভিডিও তৈরি করার প্রযুক্তি।
ডিপফেক ভিডিওর অপব্যবহার আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষ এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২৭ সালের মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক জালিয়াতির ক্ষতি ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘটনার উদাহরণ হলো, হংকং-এর একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার ছদ্মবেশে ভিডিও কলের মাধ্যমে ২৫.৬ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়া। ক্রিপ্টোকারেন্সি সেক্টরেও ডিপফেক জালিয়াতির ঘটনা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এর বৃদ্ধি হয়েছে ৬৫৪ শতাংশ, যেখানে ২০২৩ সালে শনাক্ত হওয়া ডিপফেক জালিয়াতির ৮৮ শতাংশই এই সেক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ডিপফেক তৈরি করতে উন্নত সফটওয়্যার ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই প্রযুক্তি এত সহজে ব্যবহারযোগ্য হয়েছে যে, মোবাইল অ্যাপ দিয়েও সাধারণ মানের ডিপফেক ভিডিও তৈরি করা সম্ভব। ফলে এর অপব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
এই প্রযুক্তি মূলত প্রতারণা ও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক সময় ডিপফেক ব্যবহার করে কোম্পানির সিইও বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কণ্ঠস্বর নকল করা হয় এবং কর্মচারীদের ভুল নির্দেশনা দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। নির্বাচনের সময় ভুয়া ভিডিও তৈরি করে প্রার্থীকে বিতর্কিত বক্তব্য দিতে দেখানো হয়, যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করে। এছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে, যার ফলে ভুক্তভোগীরা সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
তবে ডিপফেক প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারও সম্ভব—যেমন বিনোদন, চলচ্চিত্র বা শিক্ষামূলক কাজ। কিন্তু প্রতারণা, গুজব ও ব্ল্যাকমেইল তৈরিতে এর অপব্যবহার সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। তাই প্রয়োজন ডিপফেক শনাক্ত করার উন্নত প্রযুক্তি, ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং কার্যকর আইনগত পদক্ষেপ, যাতে প্রতারণা রোধ করা যায়।
লেখক: প্রযুক্তি গবেষক