গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্যাভ্যাস: মায়ের ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য কী খাওয়া উচিত

মনোযোগ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৭ এএম

গর্ভধারণের পর থেকে মায়ের এবং গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্যাভ্যাস পরিকল্পনা করা উচিত। প্রথম তিন মাসে শারীরিক অরুচি ও বমি ভাবের কারণে খুব কম পরিমাণে, তবে পেট ভরে খাবার খাওয়া ভালো। এই সময়ে দিনে চার বার ভাগ করে খাওয়া সুবিধাজনক।
ফলিক এসিড
গর্ভাবস্থার প্রথম ১৩ সপ্তাহে ফলিক এসিড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভিটামিন বি-এর একটি ধরন, যা ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি কমাতে সাহায্য করে। সঠিক মাত্রায় ফলিক এসিড গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি প্রায় ৭০% কমে যায়। ফলিক এসিডের সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, শতমূলী, কমলালেবু ইত্যাদি খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
আয়রন
গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি সাধারণ। আয়রন কম হলে গর্ভের শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যা শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে। তাই পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি। আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন লেবু, কমলালেবু, আমলকি, আঙুর ও আপেল খেতে হবে।
জিংক
শরীরের কোষ গঠনের জন্য জিংক গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন হয়। ডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, মুরগি ও গরুর মাংস, দুধ ইত্যাদি জিংকসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। ডাক্তার প্রয়োজনমতো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেবেন।
ক্যালসিয়াম
শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে গর্ভের শিশুর জন্য শরীর থেকে ক্যালসিয়াম সরবরাহ হয়, যা মায়ের হাড়কে দুর্বল করে। দুধ, দই, পনীর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, কাঁটাযুক্ত মাছ, টফু, পালং শাক, ডিম, তিল, আমন্ড ইত্যাদি ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে, তাই প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট রোদ লাগানো উচিত।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
ওমেগা-৩ শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থার শুরু থেকে সাপ্লিমেন্ট ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ শিশুর চোখের দৃষ্টি, বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশে সহায়ক। প্রথম তিন মাসে ভিটামিন এ, ডি ও সি যুক্ত খাবার খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোটিন ও আঁশ
গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের চাহিদা দৈনিক ৭০-১০০ গ্রাম। ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রকলি ও শাক-সবজি সহ উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করাও অপরিহার্য।
কী খাবেন না
অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা ও কফি কম খাওয়া উচিত, কারণ এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
সামুদ্রিক মাছ কম খেয়ে মিঠা পানির মাছ বেছে নিন, কারণ সামুদ্রিক মাছের পারদ ভ্রূণের মস্তিষ্ক বিকাশে ক্ষতিকর।
আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস, আনারস ও কাঁচা পেঁপে এ সময়ে এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, প্রয়োজনমতো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গর্ভাবস্থায় মায়ের ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।