আরাকান আর্মির হাতে ১১৬ বাংলাদেশি জেলে আটক, ফিরতি পথ অনিশ্চিত

মনোযোগ প্রকাশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৮ এএম

ছবি: সংগৃহীত

নাফ নদ এখন সীমান্তের রাজনীতির সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়েরও প্রতীক হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে বারবার আটক হচ্ছেন বাংলাদেশি জেলেরা। প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসেই ১১৬ জেলে বন্দি হয়েছেন আরাকান আর্মির হাতে। চলতি বছরে মোট ২৩৫ জেলে আটক হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১১১ জন এখনও মিয়ানমারে আটক আছেন।


নাফ নদ-বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সীমারেখা—এখন রূপ নিয়েছে ভয়ের নদীতে। মাছ ধরতে গিয়ে বারবার আরাকান আর্মির হাতে পড়ছেন টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের জেলেরা। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ১১৬ জন জেলে অপহৃত হয়েছেন। বিজিবির তথ্যমতে, এ বছর এখন পর্যন্ত ২৩৫ জেলে আটক হয়েছেন, এর মধ্যে ১২৪ জন ফেরত এসেছেন, কিন্তু ১১১ জনের কোনো খোঁজ নেই।

আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেরা জানিয়েছেন, তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দিনে দুবার মারধর, না খাইয়ে রাখা, এমনকি কলাগাছ সিদ্ধ করে খেতে বাধ্য করা হয়। আটক জেলেদের কাছ থেকে বাংলাদেশের সীমান্তচৌকির তথ্যও জানতে চাওয়া হয়। অনেক সময় কৃষিকাজেও ব্যবহার করা হয় তাদের।

বোট মালিকরা জানিয়েছেন, জেলেরা সাধারণত ফেরার পথে আটক হন, তখন বোটভর্তি থাকে লাখ টাকার মাছ। এসব মাছ, জাল, ও অন্যান্য সরঞ্জাম ছিনিয়ে নেয় আরাকান আর্মি।

তিনটি কারণেই বাড়ছে আটক:
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তিনটি কারণে বাংলাদেশি জেলেদের আটক করছে আরাকান আর্মি—
* জান্তা সরকারের বিমান হামলার আশঙ্কায় নৌপথে টহল বাড়ানো;
*খাদ্য সংকটে মাছ, জাল ও মালপত্র লুট;
*বাংলাদেশের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ স্থাপন করে বৈধতা অর্জনের চেষ্টা।

পরিবারগুলোর করুণ অবস্থা:
কালবেলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শতাধিক পরিবার এখন নিঃস্ব। অনেক পরিবারে একাধিক সদস্য আটক। মায়েরা সন্তানহারা, সন্তানরা পড়াশোনা বন্ধ করেছে। ষাটোর্ধ্ব মদিনা বেগমের তিন ছেলে ও এক জামাতা আটক—তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “যেভাবেই হোক আমার সন্তানরা যেন ফিরে আসে।”

প্রশাসনের অবস্থান:
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “জেলেরা মিয়ানমার সীমান্তে গেলেই তাদের আটক করা হয়। অন্য দেশের ভূখণ্ডে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা জেলেদের সতর্ক করছি এবং আটক জেলেদের ফেরানোর চেষ্টা করছি।”

তবে তিনি স্বীকার করেন, অনেক পরিবার প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয় না, ফলে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন।

মূল সমস্যা সীমানা চিহ্নিত না থাকা:
জেলেরা বলছেন, সীমান্তে স্পষ্ট চিহ্ন না থাকায় তাঁরা বুঝতে পারেন না কখন মিয়ানমার সীমায় ঢুকে পড়েন। অনেক সময় জোয়ারের ঢেউয়ে ভেসেও সীমানা অতিক্রম হয়। আর মিয়ানমার সীমান্তে মাছ বেশি থাকায় ঝুঁকি নিয়েও তাঁরা সেখানে যান।

স্থানীয় দাবি:
বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ বলেন, “অস্ত্রের মুখে জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। এখন জেলেরা নদীতে যেতে ভয় পান। সরকার দ্রুত বন্দিদের ফেরাতে না পারলে উপকূলজুড়ে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে।”


নাফ নদ এখন কেবল সীমান্ত নয়—এটি হয়ে উঠেছে জীবিকার ঝুঁকি, কান্না আর অপেক্ষার প্রতীক। আরাকান আর্মির আগ্রাসন ও প্রশাসনিক অসহায়তার মাঝে ১১৬ পরিবার আজ বন্দি অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে।

যোগাযোগের ঠিকানা:

কুড়িগ্রাম অফিস: কলেজ রোড (রাজিবপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন),
চর রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম।

ঢাকা অফিস: ২/এ, কালাচাঁদপুর মেইন রোড, ঢাকা- ১২১২

ইমেইল: monojogprokash2021@gmail.com

মোবাইল: +8801948-645226