গাজায় নিশ্চিহ্ন মসজিদ, ধ্বংসস্তূপ থেকেই ভেসে আসছে আজান

মনোযোগ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৪ এএম

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজার অধিকাংশ মসজিদ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। শতাব্দীপ্রাচীন স্থাপত্য হারিয়ে গেছে, তবুও ধ্বংসের মাঝেই আজান দিচ্ছেন মুয়াজ্জিনরা, নামাজ পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। এই দৃশ্য যেন এক অবিনশ্বর ঈমানের প্রতীক।
গাজার আকাশজুড়ে ধোঁয়া, মাটিজুড়ে ধ্বংসস্তূপ-আর সেই ধ্বংসস্তূপের ফাঁক গলে ভেসে আসে আজান। গাজার প্রায় সব মসজিদই এখন ইসরায়েলি আগ্রাসনের সাক্ষী। টানা বিমান হামলায় উপত্যকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য, মিনার ও নামাজের স্থানগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তবুও থেমে নেই আল্লাহর ডাক; মোয়াজ্জিনরা ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়েই দিচ্ছেন আজান, ফিলিস্তিনিরা নামাজ পড়ছেন ছাইভস্মের মাঝখানে।
দ্য ফিলিস্তিন ইনফরমেশন সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছরের লাগাতার যুদ্ধ গাজাকে প্রায় মিনারবিহীন করে দিয়েছে। যেসব মসজিদ একসময় নামাজের আহ্বানে মুখর ছিল, সেগুলো এখন ধূলা আর ইট-পাথরের স্তূপে পরিণত। মামলুক ও অটোমান যুগের শতাব্দীপ্রাচীন মসজিদগুলোও হারিয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়—যেন ইসরায়েলের বোমা কেবল ভবন নয়, একটি জাতির স্মৃতি ও বিশ্বাসকেও মুছে দিচ্ছে।
গাজার শুজাইয়্যা এলাকার ৬২ বছর বয়সী আবু খালেদ আল-নাজ্জার দাঁড়িয়ে বলেন, “আমার বাবার কণ্ঠস্বর চেনার আগেই আমি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ চিনতাম। পঞ্চাশ বছর ধরে এই মসজিদে নামাজ পড়েছি, আজ সেই জায়গাটাও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত উপত্যকার ১,২৪৪টি মসজিদের মধ্যে ৮৩৫টি পুরোপুরি ধ্বংস এবং ১৮০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের অনেকগুলোই শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন।
পুরনো শহরের গ্রেট ওমারি মসজিদের ধ্বংসাবশেষে ২৭ বছর বয়সী মাহমুদ কান্দিল খুঁজছেন কিবলা দেয়ালের ভগ্নাংশ। তিনি বলেন, “এই মসজিদ ছিল আমাদের গর্ব। এখন কেবল ধুলা আর নীরবতা। মনে হয় তারা শুধু ভবন নয়, আমাদের আত্মাও ধ্বংস করতে চায়।”
আল-দারাজপাড়ার আল-সাইয়্যিদ হাশিম মসজিদও এখন ধ্বংসস্তূপ। সেখানে বসে ৭৪ বছর বয়সী উম্মে ওয়ায়েল বললেন, “আমি অসুস্থ থাকলেও প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে সূরা আল-কাহফ পড়তাম। এখন যাওয়ার জায়গা নেই। তবুও আমরা ঘরে বসে কুরআন পড়ব—কারণ আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা শুনবেন, যেখানেই থাকি।”
গাজার ভগ্ন মসজিদগুলো আজ কেবল স্থাপত্য নয়—এগুলো এক জাতির অবিচল ঈমান, প্রতিরোধ আর আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।